বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষে দুমকিতে বিএনপি’র হাজারো নেতাকর্মীর ঢল সোনারগাঁয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নানের নেতৃত্বে বিএনপির বিজয় র‍্যালি কলমাকান্দা বিএনপি’র উদ্যোগে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ পালিত মরিওম হত্যা মামলার ১০ দিন অতিবাহীত পুলিশ বলছে রহস্যজনক  বরিশাল বিভাগের গর্ব — নিবন্ধিত কমিউনিটি প্যারামেডিক শামিনুল ইসলাম (শাওন) সাফল্যের গল্প কমিউনিটি প্যারামেডিক দিপু রানী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বরিশালে আনসার বাহিনীর শ্রদ্ধা নিবেদন ‎বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষে দুমকিতে বিএনপি’র হাজারো নেতাকর্মীর ঢল ‎ অবৈধভাবে চাকুরী করে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের উপযুক্ত বিচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের প্রার্থনা। আশাশুনিতে সাধারণ মানুষের সাথে মতবিনিময় করলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল্লাহ ঢালী

রংপুর থেকে গাজীপুর—কাঁচির নিচে চাপা পড়া স্বপ্ন,চুল ছাঁটি, ঘাম ঝরাই-তবুও পকেট ফাঁকা।

বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মন, রিপোর্টারঃ / ১১০ Time View
শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন

কাশিমপুর থানা এলাকার হাসান মার্কেট। সকাল থেকে রাত—একটানা গুঞ্জন, দোকানের শাটারের টকটকে শব্দ আর মাঝেমধ্যে ভেসে আসে সেলুনের কাঁচির ঝনঝন ধ্বনি। ঠিক এখানেই এক কোণে আছে ‘রাজু হেয়ার কাটিং’ নামের ছোট্ট একটি সেলুন। কিন্তু দোকানের বাইরে যতটা হাসি, ভেতরে জমে আছে না বলা কষ্ট আর চাপা কান্না—যেন কাঁচির নিচেই চাপা পড়ে থাকে তিনটি জীবনের স্বপ্ন।

দোকানটির মালিক মোঃ রাজু মিয়া। ছোটখাটো গড়ন, সহজ-সরল মানুষ। কিন্তু কথায় ফুটে ওঠে দায়িত্বের ভার। তিনি বলেন, “আমি নিজে চলি কেমনে, ওদের চালাই কেমনে—এই ভাবনাই আমাকে প্রতিদিন পোড়ায়।

দোকানে তার সঙ্গে কাজ করেন আরও তিনজন—মোঃ সামছুল হক, মোঃ রায়হান মিয়া এবং মোঃ নাজির হোসেন। সবার গল্প প্রায় একই ছাঁচে গড়া—রংপুর থেকে জীবনের উন্নত প্রত্যাশায় পাড়ি জমিয়েছেন গাজীপুরে। কিন্তু কাঁচির প্রতিটি শব্দ যেন আজ ব্যর্থতার একেকটি তীর হয়ে বিঁধছে হৃদয়ে।

সামছুল হক বলেন, “রংপুরে জীবন অনেক শান্ত ছিল। এখানে এসে দেখি—বাড়ি ভাড়া, কারেন্ট বিল, গ্যাস বিল, খাবার—সবকিছুর পেছনে শুধু টাকা আর টাকা। আয় তো সীমিত, খরচের কোনো শেষ নেই।

মোঃ নাজির হোসেনের কথা আরও করুণ। তার গলা ভারি হয়ে আসে, ঋণের জালে জড়িয়ে গেছি। দোকানের টাকা বাকি, ফার্মেসীর দেনা—সব মিলে সংসার চালানো যেন পাহাড় ঠেলার মতো কষ্টের।

তারা বলছেন, প্রতিদিন গড়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে নিজেদের থাকা-খাওয়ার খরচই মেটানো যায় না। তবু তাঁরা চেষ্টা করেন, হাসিমুখে প্রতিটি কাস্টমারের চুল ছেঁটে দেন। কেউই জানে না—এই হাতে কাঁচি চালানো মানুষগুলো নিজের জীবনটাই ঠিকভাবে সাজাতে পারছেন না।

রাজু হেয়ার কাটিং-এর মতো ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোই আমাদের শহরের চালিকাশক্তি। তারা চাকরি দেয়, তারা জীবনের চাকা ঘোরায়—কিন্তু নিজেরাই পড়ে থাকে প্রান্তিকতায়। আধুনিকতার ছোঁয়া, ঝলমলে পার্লারের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে এমন ছোট দোকান, যেখানে মানুষ পায় আন্তরিকতা, পায় যত্ন।

তবে এই আন্তরিকতার পেছনের কষ্টগুলো আমাদের চোখে পড়ে না। তাদের জীবন যেন এক চুলের রেখার উপর দাঁড়িয়ে, সামান্য ভারেই ভেঙে পড়ে।
এই সমাজে যারা আমাদের সৌন্দর্য গড়ে দেন, তারা নিজেরাই আজ জীবন যুদ্ধে অসুন্দর বাস্তবতায় হারিয়ে যেতে বসেছে। ‘রাজু হেয়ার কাটিং’-এর প্রতিটি কাঁচির আওয়াজ যেন প্রশ্ন তোলে—এ সমাজ কি কখনো এদের দিকে সহানুভূতির চোখে তাকাবে?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By BDiT