নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ করে চিহ্নিত এক মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ ঘোষণা থাকলেও, বাস্তবে পুলিশের একাংশ যেন সেই যুদ্ধের পথরেখায় না চলেই ঘুষের চোরাপথে পা বাড়িয়েছে। আর এরই জ্বলন্ত উদাহরণ—কাশিমপুর থানার এসআই মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া ‘ঘুষের বিনিময়ে মুক্তি’ নাটক।
জানা গেছে, গত ১৮ জুন (বুধবার) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাশিমপুরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সারদাগঞ্জ মুন্সি মার্কেট এলাকায় অবস্থিত কুখ্যাত মাদক কারবারি জুয়েল হোসেনের বাড়িতে হঠাৎ অভিযান চালান কাশিমপুর থানার এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম ও তার সোর্স আঃ রহিম। অভিযান চলাকালে ঘরে মাদক না মিললেও জুয়েলের দেহ তল্লাশিতে মাদক সেবনের একটি ফয়েল পেপার উদ্ধার হয়।
পুলিশি অভিযানের এমন ‘ফাঁকা ফল’ সত্ত্বেও শুরু হয় ঘুষের নতুন খেলা। অভিযোগ রয়েছে, এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম জুয়েলের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। মধ্যস্থতায় তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা নগদ আদায় করা হয় এবং বাকি টাকা পরে দেওয়ার শর্তে স্থানীয় ব্যক্তি আলমগীর কাজীর জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জুয়েল হোসেন নিজেই গণমাধ্যমকে বলেন— বাসায় কিছু না পেলেও পুলিশ টাকা চায়। আমি তো সব ম্যানেজ করেই চলি। থানায় যেসব সোর্স আছে, সবাইকেই টাকা দিতে হয়। এরপরও কেন অভিযান চালানো হলো, বুঝতে পারি না।”
তার এই মন্তব্য কেবল পুলিশ প্রশাসনের নয়, পুরো সমাজের জন্যই এক ভয়ঙ্কর বার্তা—মাদক ও ঘুষের এই অন্ধ আঁধারে আইন যেন নিজেই নিঃশব্দে আত্মসমর্পণ করেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এসআই মঞ্জুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করেন— আপনার কাছে তো সব তথ্যই আছে।”
এ সময় তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি ম্যানেজ করার প্রস্তাব দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, কাশিমপুর থানার ওসির নির্দেশেই এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী জুয়েলের মতো অসংখ্য কারবারিকে গোপনে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। সোর্সদের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে আর পুলিশের কিছু সদস্য তা জানলেও বিনিময়ে হাত পেতে নিচ্ছেন ঘুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন— আমাদের এলাকায় মাদকের অবাধ বেচাকেনা চলছে। অথচ অভিযানে গিয়ে পুলিশ টাকা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দিচ্ছে! এভাবে চলতে থাকলে মাদক আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেবে।”
ঘটনার বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ক্রাইম উত্তর) রবিউল ইসলাম বলেন— কোনো অপরাধীই ছাড় পাবে না। অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এই ঘটনার পর স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন— যদি পুলিশই মাদক ব্যবসায়ীদের পাহাড়া দেয়, তাহলে আমরা যাব কোথায়?”
রাষ্ট্র যখন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব হয় তার বাস্তবায়ন। কিন্তু যদি সেই পুলিশই ঘুষের বিনিময়ে অপরাধীদের মুক্ত করে, তাহলে সমাজ কি নৈতিক পতনের অতল গহ্বরে না ঢুকে পড়ে?
কাশিমপুরের এই ঘটনা যেন কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় না হয়ে ওঠে। প্রয়োজন, নিরপেক্ষ তদন্ত, কঠোর বিচার এবং পুলিশ বাহিনীর ভেতর থাকা ঘুষখোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হোক সত্যিকারের শুদ্ধতা ও জবাবদিহিতার ভিতর দিয়ে—নয়তো কাশিমপুরের এই অন্ধকার কাহিনি ছড়িয়ে পড়বে পুরো দেশজুড়ে।