বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে আসছে পল্লী চিকিৎসকগণ। তাঁদের ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল ডাক্তার এসোসিয়েশন (বিপিডিএ) ২০০৬ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংগঠন দেশের ৬৮ হাজার গ্রামের দরিদ্র, দুঃখী ও শ্রমজীবী মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে, বিগত এক বছর ধরে বিপিডিএ-এর পরিচালনায় টেলিমেডিসিন কার্যক্রম অত্যন্ত সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যা দেশের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সুবিধা অতি স্বল্প খরচে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। এর ফলে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে এবং চিকিৎসার ব্যয়, সময় ও দূরত্বের সীমাবদ্ধতা অনেকাংশেই দূর হয়েছে।
সম্প্রতি, পল্লী চিকিৎসকদের আইনগত স্বীকৃতি ও টেলিমেডিসিন কার্যক্রমের বৈধতা নিশ্চিত করতে বিপিডিএ-এর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ক) ধারা উল্লেখ করে বলা হয়েছে:
“রাষ্ট্র নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
এছাড়া ১৮(১) ধারা অনুযায়ী:
“রাষ্ট্র জনগণের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
বিপিডিএ-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পল্লী চিকিৎসকরা এই সাংবিধানিক ধারাগুলোর বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তবুও তাঁরা এখনও সরকারিভাবে স্বীকৃতি ও পেশাগত বৈধতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন, যা তাঁদের সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় বাধা।
স্মারকলিপিতে প্রস্তাব করা হয়েছে:
🔹 পল্লী চিকিৎসক (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন, যাতে পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, নিবন্ধন, লাইসেন্স প্রদান ও মান নিয়ন্ত্রণের সুস্পষ্ট বিধান থাকে।
🔹 টেলিমেডিসিন কার্যক্রমকে সরকারিভাবে অনুমোদন দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ধারা ২৬ অনুযায়ী আইনি বৈধতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
🔹 বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এবং পাবলিক হেলথ (প্রিভেনশন) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯ এর আলোকে বিপিডিএ-এর কার্যক্রম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বিত করা।
এছাড়াও, স্মারকলিপিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন টিম & হিউম্যান রাইটস এন্ড লিগ্যাল এইড (ICITHRLA)-এর সহযোগিতায় প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, মানবাধিকার সুরক্ষা ও আইনগত সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ সহযোগিতা দেশের স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে এবং রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
বিপিডিএ নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেছেন যে, সরকারের আশু কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে পল্লী চিকিৎসকরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার ও স্বীকৃতি পাবেন। পাশাপাশি, টেলিমেডিসিন কার্যক্রমের সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা বেগবান হবে।
পরিশেষে, সরকারের সহযোগিতায় এই স্বাস্থ্যসেবার বিপ্লব জনগণের কল্যাণে আরও বেগবান হবে—এমন প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল ডাক্তার এসোসিয়েশন (বিপিডিএ)।