স্টাফ রিপোর্টার
কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়া মাছপাড়া ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামের এক নারী মুক্তা খাতুনের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ফেসবুকে প্রেমের অভিনয়, বিয়ের প্রতিশ্রুতি এবং পারিবারিক বিপদের কথা বলে একাধিক পুরুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের মতে, এটি কোনো ব্যক্তিগত অপকৌশল নয়, বরং একটি সুসংগঠিত প্রতারক চক্রের অংশ হয়ে কাজ করছে সে।
অভিযুক্ত নারী হলেন, মুক্তা খাতুন (২৫) আমিরুল ইসলাম ও মোছাঃ ময়ফুল নেছার কন্যা। তার স্থায়ী ঠিকানা—গ্রাম: আলীনগর, ইউনিয়ন: ঝাউদিয়া মাছপাড়া, জেলা: কুষ্টিয়া।
ভুক্তভোগীরা “বিডিসি ক্রাইম বার্তা”-কে জানান, মুক্তা খাতুন একাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে নিজেকে কখনো ‘রিয়া’, কখনো ‘মীম’, শপ্ন বিলাস শপ্ন, আবার কখনো ‘বিদেশফেরত নারী’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুদিন ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলে প্রেম ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (বিকাশ, নগদ) মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়। অভিযোগ রয়েছে, এই কৌশলে এককভাবে প্রায় ৮ লাখ টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী’রা আরও জানান, মুক্তা খাতুন বিভিন্ন মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের মধ্যে রয়েছে:
01337-202920, 01728-129795, 01700-812828, 01330-205381, 01797-562167
তারা জানান, প্রেম ও বিশ্বাসের আবরণে ফাঁদে ফেলে একপর্যায়ে মুক্তা বিপদের কথা বলে টাকা চেয়ে নেন। কেউ ২০ হাজার, কেউ ৫০ হাজার আবার কেউ একাধিকবারে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত পাঠিয়েছেন। পরে ধীরে ধীরে ওইসব ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, ফোন নম্বর বন্ধ হয়ে যায়, তখন বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন।
আইনি দিক থেকে প্রতারণা স্পষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, এই ঘটনার পেছনে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর একাধিক ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন রয়েছে:
ধারা ৪২০: প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ বা সম্পদ আত্মসাৎ – সর্বোচ্চ ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ৪১৭: সাধারণ প্রতারণা – ১ বছরের জেল বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
ধারা ৪১৯/৪১৬: ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা – ৩ বছরের কারাদণ্ড।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব ঘটনায় মুক্তা খাতুন একা নন; তার পেছনে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র রয়েছে, যারা নারীকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
জরুরি পদক্ষেপের দাবি
ভুক্তভোগীরা এই ঘটনায় দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা মুক্তা খাতুনের ব্যবহৃত ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি এবং বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্ট যাচাই করে প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
অচেনা ফেসবুক আইডির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ার আগে সতর্ক হোন কোনো আর্থিক লেনদেন করলে প্রমাণ রেখে লেনদেন করুন বিপদের কথা শুনে আবেগ প্রবণ হয়ে টাকা পাঠাবেন না প্রতারণার শিকার হলে নিকটস্থ থানায় জিডি করুন বা মামলা দায়ের করুন
প্রযুক্তির এই যুগে যেমন সুবিধা এসেছে, তেমনি প্রতারণার ধরনও বদলে গেছে। প্রেমের অভিনয়ের আড়ালে এই ধরনের প্রতারণা এখন সমাজে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। সময় এসেছে—এই চক্রের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা ও কঠোর আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার।