মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার
মাদকবিরোধী অভিযান শুধুমাত্র প্রশাসনের নয়, সমাজের সচেতন নাগরিকদেরও দায়িত্ব—এ বার্তাই যেন আবারও প্রমাণ করল কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের অন্তর্গত ছিনাইয়া ও আংশিক আনন্দপুর এলাকার একদল সাহসী তরুণ। এই এলাকার যুব সমাজের সরাসরি অংশগ্রহণে পরিচালিত এক ব্যতিক্রমী অভিযানে জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৩০ কেজি গাঁজা। আটক করা হয়েছে চিহ্নিত তিন মাদক ব্যবসায়ীকে, যাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম হচ্ছে উত্তর আনন্দপুর এলাকার হাবুল মিয়ার ছেলে জেনারুল। দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যক্তি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। তার পাশাপাশি আরও দুই নারী মাদক প্রচারকারীও জনতার সহায়তায় হাতেনাতে আটক হন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরেই ছিনাইয়া ও এর আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসা চলে আসছিল, যা তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। এই অবস্থায় ছিনাইয়ার যুব সমাজ উদ্যোগ নেয় নিজেদের এলাকা থেকে মাদক চক্রকে নির্মূল করার। গোপন তথ্য অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে তারা মাদক কারবারিদের হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং সঙ্গে সঙ্গে খবর দেয় বুড়িচং থানায়। পরে পুলিশ এসে অভিযুক্তদের আটক করে এবং মাদকসহ থানায় নিয়ে যায়।
বুড়িচং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন,“ছিনাইয়ার যুব সমাজ আমাদের চোখে উদাহরণ হয়ে থাকবে। তারা যে সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতা দেখিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সমাজ যদি এভাবেই সচেতন ও সংগঠিত হয়, তাহলে অপরাধ অনেকাংশেই কমে যাবে।”
ছিনাইয়ার মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়া তরুণরা জানান,
“আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। শুধু আমাদের এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করাই আমাদের লক্ষ্য। কেউ যেন আমাদের ভাই, বোন, বন্ধুরা মাদকের ছোবলে শেষ না হয়ে যায়—এই চিন্তা থেকেই আমরা সকলে একত্র হই। আমরা এই পথচলা চালিয়ে যাব।”
স্থানীয় এলাকাবাসী এই তরুণদের উদ্যোগে অভিভূত। অনেকেই বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের যুবকরা যদি এমন দায়িত্ব নেয়, তাহলে দেশ থেকে মাদক দূর করা সম্ভব। গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন,
“এই তরুণদের দেখে আমরা গর্বিত। এদের হাতেই ভবিষ্যৎ। আমরা সবসময় তাদের পাশে থাকব।”
স্থানীয় একজন মা বলেন,“আমার সন্তানদের বাঁচাতে হলে এমন যুব সমাজকেই উৎসাহ দিতে হবে। মাদক সমাজের অভিশাপ, আর এই তরুণরাই এখন আশার আলো।”
এই ঘটনার পর ছিনাইয়া এলাকায় এক ধরনের সামাজিক বিপ্লব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক তরুণ উৎসাহিত হয়ে মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অভিভাবকরা সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য এই যুব সমাজের নেতৃত্বকে সমর্থন করছেন। স্থানীয় মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, সামাজিক সংগঠনের নেতারাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাদের সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
একটি সমাজে যখন মাদক ব্যবসা ও অপসংস্কৃতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন তা প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজন হয় তৃণমূলের সম্মিলিত প্রতিরোধ। ছিনাইয়ার যুব সমাজ সেই উদাহরণ গড়েছে, যেখানে প্রশাসনের আগেই একদল তরুণ এগিয়ে এসেছে সমাজ রক্ষার শপথ নিয়ে। এ ঘটনাটি শুধু বুড়িচং নয়, গোটা কুমিল্লা ও বাংলাদেশের তরুণ সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।