২০২৫ সালের ঈদুল আজহা চলে গেল এই তো বিগত সাত জুন। মুসলিম উম্মাহের প্রতিটা ঘরে দেখা গেল আনন্দের ভিন্ন কিছু। সেই চমৎকার দৃশ্য অসাধারণ স্মৃতিগুলো কি আর বন্ধি করে রাখা সম্ভব। তদুপরি কিছু কিছু মিডিয়াকর্মী, সাংবাদিক, সচেতন শিক্ষিত সমাজ লিখে বা ক্যমেরাবন্দী করে অনেক স্মৃতি মানুষের সামনে তুলে ধরেছে।
প্রতিটা স্মৃতি, কৃতি, অনুভূতি এক অনন্য ও ভিন্ন রকম। কোনটাই যেন কম নয়, প্রতিটাই নিজগুণে নিজে নিজে সেরা।
এমন কিছু স্মৃতি আমার কাছেও রয়েছে। যেগুলো প্রকাশ করতে খুব আগ্রহী। কিন্তু সময় সুযোগ হয়না, আবার সন্দিহান থাকে যে, যদি লেখা লেখকদের মত না হয়। তাহলে অবশ্য লেখার আগ্রহ কমে যায়।
লেখা এমন হবে যে, যে লেখার মাঝে থাকবে, আবেগ-অনুভূতি, দুঃখ-কান্না, আর সুখ ও হাসির মিলন। প্রতিটা লেখা যেন প্রতিজন পাঠকের হৃদয় জয় করতে পারে, এমন লেখাকেই লেখা বলে।
তবে হ্যাঁ লেখক বাজারে, লেখকের অভাব নাই, মাঠে ময়দানে অনেকেই কাজ করছে। লিখনীর মাধ্যমে অবিকল আর্টিস্টদের মত ফুটিয়ে তুলছে সময়ের আলোচিত সব প্রতিচ্ছবি।
যেন একটা আর্ট। লেখা দেখার সাথে সাথে পাঠকের হৃদয়ে অংকন করছে ভিন্ন কিছু। স্মৃতিগুলো পড়ার আগেই ভিন্ন কিছু জাগ্রত হচ্ছে পাঠক হৃদয়ে।
এমন এক বাস্তবতার উদাহরণ তুলে ধরতে চাই আজকের লিখনীতে। যে লেখায় ফুটে উঠবে একটি ঈদের অনন্য স্মৃতি, আবেগ অনুভূতি ও ভালোবাসার অনেক কিছু।
চেনা জায়গায় অচেনার মত ঈদ উদযাপন। স্মৃতিতে অনেক কিছু রেকর্ড থাকবেই। দীর্ঘদিন থেকে অবস্থান করছি গাজীপুরে। তিন বৎসর কিন্তু কম সময় নয়। তবে এই সময়ের ভিতরে গাজীপুরের মা-মাঠি ও মানুষকে এখনো চেনা জানা হয়নি বা পুরাুপুরি ভাবে সমাজ পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে মিশে যেতে পারিনি। কেননা মাদরাসায় খেদমত মানেই, বন্দি থাকার মত। প্রাইভেট মাদরাসাগুলোতে টানা ২৪ঘন্টা থেকে পরে আর কিছু ভালো লাগে না। একটু ঘুরাঘুরি করলে মানুষ কি বলবে? অনেক কিছু মনের মাঝে আসে। তাই তেমন কোথায়ও যাওয়া হয়নি। তবে হ্যাঁ কিছু কিছু জায়গা যেমন তুরাগ নদীতে নৌকা ভ্রমন, ভাঙ্গাব্রীজ, সাজেদাপার্ক ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানে গিয়েছি।
এবার ঈদেও ব্যতিক্রম হয়নি। দুই ভাই মিলে অন্যরকম স্মৃতিতে মিশে গেলাম। ফজরের নামাজ শেষ হলেই তো ঈদের নামাজের প্রস্তুতি। সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোষাক পরে সবাই নিজেদের মাঝে আনন্দ করছে। সারি সারি মুসল্লিগণ দেখতে কত সুন্দর লাগছে। অপলক নয়নে থাকিয়ে আছি সবার দিকে। এ যেন জান্নাতের প্রতিচ্ছবি। আল্লাহর গুণগান আর তাসবীহ তাহলিল যেন শ্লোগান।
তাকবীরে তাশরিক “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা—ই লাহা, ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওলিল্লাহিল হামদ বলিয়া বলিয়া সবাই মসজিদে প্রবেশ করছে।
ইমাম সাহেব কুরবানীর ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরছেন। জবেহ করার কৌশল, নামাজ আদায়ের সঠিক প্রদ্ধতি, কোরআন আর হাদিসের আলোকে বর্ণনা করছেন। সবাই থাকিয়ে আছে। নিরব নিস্তব্ধতার ছায়া নীড় দুনিয়ার জান্নাত মসজিদের নিম্বরের দিকে। ইমামের খুৎবায়ে উঠে আসছেন জানা অজানা অনেক কিছু।
আটটায় ঈদের নামাজ শুরু হয়ে গেল। অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে দুই রাকাত নামাজের পর খুব চমৎকার ভাবে খুৎবাহ প্রদান করেন সম্মানীত খতিব সাহেব।
অতঃপর সবাই কুরবানীর প্রস্তুতি নিল। সবার সাথে আমরাও চলে গেলাম কুরবানী দেখতে। মালেকাবাড়ী মোড় থেকে জিয়াসখাঁন স্কুল পর্যন্ত প্রায় ৫০টির মত ছোট বড় গরু, ছাগল ইত্যাদি জবাইয়ের প্রস্তুতি চলছিল।
সবার মাঝে কি আনন্দ। নিজেরাই নিজের পশু কুরবানী, আবার কেউ কেউ অন্যান্য নেককার বান্দাদের মাধ্যমেও জবাই করছিল। জবাইগুলে দেখে দেখে, কুরবানীর আনন্দ অনুভব করে বাসায় চলে আসি।
হালকা বিরতি তথা ঘন্টা খানিক আবার দুই ভাই মিলে বের হয়ে দেখি রাস্তার পাশে বা প্রকাশ্য জায়গায় কুরবানীর কোন গরু ছাগল, পড়ে আছে চামড়া নাড়িভুড়ি র কিছু চিহৃ। রয়েছে কিছু রক্তমাখা স্পট।
কোথায় গেল? এই সব জবেহ কৃত গরু ছাগল গুলো। খুঁজতে থাকি মনে মনে। দেখি দেখি কিছু কিছু বাড়ীর সামনে কিছু কিছু মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। তারা গেইটের বাহিরে থেকে অপেক্ষা করছে এক টুকরা গুস্তের।
তখন যোহরের নামাজের সময় চলে আসে, আমরা চলে যাই মসজিদে। এসে দেখি কিছু কিছু জায়গায় গুস্ত বিতরণ শুরু হয়েছে।
একটুকরা গোস্তের জন্য তারা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেকে লজ্জিত মনে হল।
দুই ভাই মিলে তাদের সাথে মিশে যেতে চাইলাম। কিন্ত আত্মসম্মানে আঘাত লাগবে বলে আমরা পারিনি একটুকরা গুস্তের জন্য কোথায় যেতে। তবে বাস্তবতার কিছু স্মৃতি লিপিবদ্ধ করতে থাকি।
বিকাল দুইটার দিকে আবারো আমরা বের হয়ে চলে যাই মতি ভাইয়ের এর বাসায়। দেখি গুস্ত পোলাও রেডি। কি ব্যাপার? কেমনে কি জানতে চাইলাম। একটু মুচকি হেসে বললেন, কি আর করব ভাই।
ঈদের একটা দিন আমাদের ছুটি নেই। তিনি আসলে একজন শিক্ষিত মানুষ। অনেক দিন থেকে পরিচিত। কখনো বাসায় যাওয়া হয়নি,,,,,,। আজ আবার কৌতুহল বশত যাওয়া। জানতে ইচ্ছা করল, ঈদের দিন আবার দুইজন হুজুর একসাথে উনার বাসায়। আনন্দ তো লাগছেই। তবে মনের মাঝে দুঃখগুলো ক্রমে প্রকাশ পেতে থাকল।
জানতে চাইলাম কি হয়েছে? একটু শান্তভাবে বুঝিয়ে বললেন, এই যে খাবার দেখছেন; খাবার গুলো ছয় শ টাকার বিনিময়। ঈদের দিন বাসা বাড়ীতে থাকি, তাই কয়েকজন মিলে একটু গুস্তের আয়োজন করছিলাম, যেন খেতে পারি একটু ভাত। কিন্তু কি হল? দুই টুকরা গুস্ত আর একটু ভাত, সামান্য ঝুল শেষ পর্যন্ত ঈদের দিনের খাবার। তাও আবার ছয় শত টাকার বিনিময়।
তিনি ফাজিল বা ডিগ্রী পাশ। তবে পেশায় আছেন একজন প্রহরী হিসাবে। কোম্পানীর দায়িত্বে তিনি একজন গার্ড। সেই প্রথম থেকে এখনো বেতন বৃদ্ধি পায়নি। দুঃখজনক সত্য তিনি বেতন বাড়ানোর কথা বললে কর্তৃপক্ষ বলে বেতন বাড়াবে না, চলে যেতে চাইলে চলে যেত পার।
এখন আর কি করার? তিন জন সুখ-দুঃখ শিয়ার করে আবারো বাহিরে আসলাম। তখন তিনটা হয়ে গেছে। তারপর ও গেইটে গেইটে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।
এই দৃশ্যটা উপলব্ধি করার জন্য প্রায় তিন ঘন্টা পায়ে হেটে পৌঁছে যাই তুরাগ নদীর তীরে।
তখন সন্ধা প্রায়, সুর্য্য লালিমায় ছেয়ে গেছে বিশ্ব। সুন্দর দৃশ্য দেখে হারিয়ে গেলাম দৃশ্যের সৌন্দর্য্যের মাঝে। সত্য অনেক ভালো লাগছিল। বিশাল নদী আর সারি সারি নৌকা, এর মাঝে মানুষের চলাচল।
এ সব দেখে সকালের দুঃখের দৃশ্যগুলো ভূলে গেলাম। ঈদ আনন্দ তিনজন উপভোগ করলাম।
সত্য ঈদের দিন শেষ বিকালে আমাদের অনেক ভালো লাগছিল। আমরা আনন্দিত। তবে বাস্তবতার কিছু কথা না বললে না হয়।
এই যে গুস্ত বন্ঠন পদ্ধতি। কেমন যেন লাগল, একটুও পছন্দ হয়নি। এত এত গরু জবাই হল। কিন্তু কেউ পেল আর কেউ পেল না। এর মাঝে অনেকে একশটা গেইটে যাওয়ার পর একশ টুকরা গুস্ত পেয়েছে। আবার অনেকে ফ্রিজ একটার পরিবর্তে তিনটি ভরে রেখেছে। আবার কেউ কেউ গুস্ত সংগ্রহ করে বিক্রি করেছে। এর মাঝে অনেকে পায় নাই।
এসব কেন? বৈষম্য ত রয়ে গেল। লক্ষ লক্ষ টাকার কুরবানী হল কিন্তু কেউ পেল কেউ পেল না। তাই বলছি কি জানেন কুরবানীর পূর্বে প্রতিটি এলাকায় সকলের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। আর সবার ঘরে ঘরে গুস্ত পৌঁছিয়ে দেওয়া দরকার।
এ সব কে করবে?
সমাজ সচেতনতায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কুরবানীর মত বিশাল ত্যাগের যথাযথ ভাবে পৌঁছাতে হবে সবার ঘরে ঘরে।